শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
লালমনিরহাটে তিনটি গ্রামকে মাদক মুক্ত এলাকা ঘোষণা করলো “শাহীন সচেতনতার প্লাটফর্ম” রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে বেদখল সরকারি খাল উদ্ধার চুনারুঘসটে ভাগিনার হাতে মামা খুন ভোলাগঞ্জ পাথর লুট ও টাঙ্গুয়ার হাওরে অপরিকল্পিত পর্যটনের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে সমাবেশ চাঁদাবাজিতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: আসিফ মাহমুদ বীমা আইন লংঘন করে তাকাফুলে একই পরিবারের তিন পরিচালক নন-লাইফ বীমা খাতের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু ভাবনা শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ হচ্ছে এক হাজার ৩২২ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করল বিজিবি জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা
আগৈলঝাড়ার শুটকি পল্লীর শুটকী মাছের চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে

আগৈলঝাড়ার শুটকি পল্লীর শুটকী মাছের চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে

মৃদুল দাস, আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজাপুর শুটকি পল্ল¬ীর দেশী শুটকী মাছ রপ্তনী হচ্ছে বিদেশে। এখন চলছে শুটকীর ভরা মৌসুম। প্রকৃতিক পরিবেশে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে উৎপাদিত এই শুটকী পল্লীর শুটকী মাছের কদর রয়েছে দেশ ও বিদেশে। তবে আগের মত দেশী প্রজাতির মাছের স্বল্পতার কারণে হতাশায় ভুগছেন শুটকী পল্লীর সাথে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবি পরিবারগুলো। উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পশ্চিম সীমান্তবর্তী রাজাপুর গ্রাম। এই গ্রামের সাথেই ভৌগলকিভাবে জড়িত রয়েছে রামশীল, জহরেরকান্দি, ত্রিমুখিগ্রাম। রাজাপুর গ্রামের শুটকী ব্যবসায়ী অবনী রায় জানান, তিনি গত ১৮বছর ধরে এই মৌসুমে শুটকী মাছের ব্যবসা করে আসছেন। রাজাপুর, রামশীল, জহরেরেকান্দি গ্রামসহ এ অঞ্চলের পাঁচ শতাধিক পরিবার শুটকী মাছের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে এক পাশে সন্ধ্যা নদী অন্য পাশে কোটালীপাড়ার বিল এলাকার মধ্যবর্তী উপজেলার পয়সারহাট-ত্রিমুখী-রাজাপুর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শুটকি পল্লী। বিলাঞ্চলের স্বাদু ও মিঠা পানির নানা প্রজাতির শুটকী মাছ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে। কোন প্রকার রাসায়নিক বা কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় শুধুমাত্র প্রকৃতির উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা শুটকী পল্লীর বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলসহ এখন ভারতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আগের তুলনায় দেশী ছোট পুটি, দেশী সরপুটি, পাবদা, কৈ, শোল, রয়না, খৈলশা, মাছসহ দেশী প্রজাতীর অনেক মাছের সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে। দু¯প্রাপ্য হয়ে উঠেছে অনেক প্রজাতির দেশী মাছ। শুটকী পল্লীর সাথে জড়িত পরিবারগুলো মৌসুমী লাভের আশায় বছরের কার্তিক মাসের প্রথম থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ছয় মাস এই পেশায় নিয়োজিত থাকে। এই শুটকী পল্লীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাহিদা রয়েছে সিধঁল শুটকীর। যার প্রধান চাহিদা রয়েছে ঢাকা ও চট্টগামের বাজারে। সৌখিন ক্রেতারাও এই শুটকী পল্ল¬ী দেখতে এসে তাদের চাহিদানুযায়ি শুটকী মাছ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাজার থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়। আবার ঢাকার কাওরান বাজার মোকামে গিয়েও পাইকারী মাছ বিক্রি করেন ব্যবসায়িরা। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই মহাজনের কাছ থেকে দাদন ও স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শুটকী মাছের ব্যবসা করলেও মৌসুম শেষে ওই দাদন ও ঋণের টাকা পরিশোধ করে তাদের হাতে আর তেমন লাভ থাকে না। মৌসুম শেষে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা। স্থানীয়রা জানান, বিশ বছর পূর্বে ভৌগলিক পরিবেশের কারণে বানিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা পয়সারহাট-রাজাপুর-ত্রিমূখী শুটকী পল্ল¬ীতে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যে পুঁঠি, শৌল, টেংরা, খলশা, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর, মেনি, ফলি, বজুরী, বাইন মাছ অন্যতম। এ শুটকী পল্ল¬ীতে দেশী প্রজাতির মাছগুলো আশ ছাড়িয়ে কেটে, পানিতে পরিস্কার করে প্রাকৃতিক নিয়মে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য মজুদ করা হয়। এখানে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত কোন রাসায়নিক দ্রব্য মাছে মেশানো হয়না। অবনী রায় আরো জানান, চাহিদার মধ্যে ক্রেতাদের প্রধান আকর্ষণ থাকে পুটি মাছের ওপর। প্রতি মন পুঠি মাছ সাইজ ভেদে তাদের ক্রয় করতে হচ্ছে দুই হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায়। প্রতি মন বাইন মাছের দাম আট থেকে ১০ হাজার টাকা, বুজরী চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, যা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না। পল্লীর অপর ব্যবসায়ী মনমথ রায়, অশোক রায়, নরেশ তালুকদার বলেন, বাজার থেকে একমন কাঁচা মাছ ক্রয় করে শুকালে ১৫-২০ কেজি শুটকি মাছ পাওয়া যায়। গড়ে প্রায় তিন মন কাঁচা মাছ শুকালে এক মন শুটকি মাছ পাওয়া যায়। একমন শুটকি পুঁটি মাছ সাত থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। শুটকী পল্লীর মাছ কাটার কাজে নিয়োজিত রাজাপুর গ্রামের সন্ধ্যা অধিকারী, আয়না বেগম, পপি অধিকারী, শোভা রানী জানান, বছরে ছয় মাস মাছ কাটার সাথে তারা নিয়োজিত থাকলেও বাকি ছয়মাস কাটে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে। তারা বলেন, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। মাছ কেটে যা আয় করি তা দিয়ে বহুকষ্ঠে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বর্তমানে শুকনা মৌসুমের শুরুতে মাছ বেশী পাওয়া গেলেও কার্তিক মাসের পর বিলে মাছ কম থাকায় তাদের দুঃখ দুর্দশা আরো বেড়ে যায়। শুটকী ব্যবসায়ী রাজাপুরের অবনী রায় বলেন, সরকারীভাবে সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায় প্রতি বছরই তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পরছেন। তাই শুটকী পল্লীর সাথে জড়িত মৎস্যজীবিরা বছরের পর বছর সরকারের সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের কাছে সহজ শর্তে ঋণ দাবি করে আসলেও বরাবরই তা উপেক্ষিত হয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি বছরের ছয় মাসে রাজাপুর গ্রামের শুটকি পল্লীর শুটকি মাছ পনের থেকে বিশ কোটি টাকায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তনী করছে। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতির পাশাপশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, শুটকি ব্যবসায়ীরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদের সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেব।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com